ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্রেসক্লাব থে‌কে সর‌বেনা নূর হোসেনের পরিবার

শাহনেওয়াজ বাবলু (ঢাকা) :
জাপা’র মহাস‌চিব ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্রেসক্লাব থে‌কে সর‌বে না ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন নূর হো‌সে‌নের প‌রিবার । গত র‌বিবার ১০ ন‌ম্ভেবর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ নূর হোসেন ‘মাদসক্ত’ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান (রাঙ্গা)। এই বক্তব্যের প্রতিবাদে অাজ বিকেল চারটা থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছে নূর হোসেনের মাসহ পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, মসিউর রহমান তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান চালিয়ে যাবেন।
বিকেল চারটার কিছু আগে নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। প্রেসক্লাবের মূল গেটের পশ্চিম পাশের ফুটপাথে তাঁরা বসে আছেন।
শহীদ নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি, তিন ভাই, একবোনসহ পরিবারের প্রায় ১২ সদস্য এই অবস্থানে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে একটা সিগারেটও পর্যন্ত খেত না। তাহলে মসিউর রহমান রাঙ্গা কোন বিবেকে এই কথা বললো? তিনি কি এসে দেখেছেন, আমার ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়ে‌ছে। নূর জনগণের জন্য রাজপথে নেমেছিল, বড়লোক হওয়ার জন্য না।’ তি‌নি ব‌লেন, (নূর) যদি নেশাখোর হত, তাহলে দেশের জন্য জীবন দিত না। কারণ, কোন নেশাখোর দেশের জন্য জীবন দেয় না। যে লোক আমার ছেলেকে এই কথা বলেছে, তার বিচার জনগণের কাছে ছেড়ে দিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাঙ্গার বিরুদ্ধে আমি মামলা করার জন্য রাজি আছি। ‘এটা আমি জনগণের কাছে বিচার চাই। তাঁকে (রাঙ্গা) ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আমি বুড়ো মানুষ, কষ্ট হলেও এইখানে বসে থাকবো। নূর হোসেন হত্যারও বিচার হয় নাই। সেই বিচারও আমি চাই। রাঙ্গা তো মন্ত্রী ছিলো, সে কোন জ্ঞানে এমন কথা বলল?’
গতকাল রোববার (১০ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির মহানগর উত্তর শাখার উদ্যোগে গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় শহীদ নূর হোসেন মাদকাসক্ত ছিলেন বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান (রাঙ্গা)। জাপা বনানীর কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মসিউর রহমান ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেনকে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।’ তাঁর দাবি, নূর হোসেনের হত্যার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ বা তাঁর সরকার দায়ী ছিল না। যে ধরনের গুলিতে নূর হোসেন মারা গেছেন, সে ধরনের গুলিও তখন পুলিশ ব্যবহার করত না।
এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্ধ শহীদ নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা। নূর হোসেনের বড় ভাই আলী হোসেন বলেন, ৩৩ বছর ধরে নূর হোসেনকে সম্মান দিচ্ছে এই জাতি। তাঁকে গণতন্ত্রের প্রতীক বলে জনগণ। শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে গণতন্ত্র দিবসও পালন করা হয়। সে গণতন্ত্রের জন্য মারা গেল। এখন তাঁরই সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা কেমন কথা হলো? আমাদের রাস্তায় নামতে হলো কেন? গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা মারা গেছে তাদের অবমাননা হলো। শহীদ পরিবারের অবমাননা হলো। নূর হোসেন হত্যাকান্ডের জন্য স্বৈরাচার এরশাদ সংসদে বসে মাফ চেয়েছিলো, আমার বাবার কাছে মাফ চেয়েছিল। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু হলো শহীদ নূর হোসেন গণতন্ত্র দিবসবস। প্রতিবছর ১০ নভেম্বর তা পালন করা হয়। এই সময়েই কেন এ বক্তব্য রাঙ্গা দিলেন। জনঘনের কাছে আমাদের দাবি, এই লোকের ব‌িচার হোক। এই লোকের নাম মুখে নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তখন কি ফেনসিডিলের ব্যবহার ছিল, ইয়াবার ব্যবহার ছিল?
নূর হোসেনের কড় ভাই আলী হোসেন বলেন, দেশের জন্য প্রতিবাদ করে উনি যদি গাজাখোর, ইয়াবাখোর ও ফেনসিডিলখোর বলা হয় তাহলে দেশের মানুষ কিভাবে প্রতিবাদ করবে। এ ধরনের কথা বললে তো কখনো ভালো মানুষ প্রতিবাদ করতে আসবে না। তখন একটা দেশে পরিস্থিতি ছিল, স্বৈরাচার দেশে ভর করেছিল। ওই সময় আন্দোলন করে তাকে হঠানো হয়েছে। ওই সময় অনেক লোক মারা গেছে। এই শহীদদের এখন অপমান করা হল। গণতন্ত্রের আন্দোলনে যারা মারা গেছে, তাদেরকে এত ছোট করছেন কেন।

তিনি বলেন, এদেশের জনগণ ওর (রাঙ্গা) বিচার করে দিতে পারে। আইন কোন কিছু না, আইন ধরাবাঁধা। জনগণের আদালতে অনেক বিচারই হয়েছে এদেশে। এমন কথা বললে ওর এদেশে থাকার অধিকার নাই। জনগণের প্রতি আহবান জানাবো, রাঙ্গাকে বয়কট করা হোক। ওর এমপি পদ কেড়ে নেওয়া হোক।

রাঙ্গাকে উল্টো নেশাখোর মন্তব্য করে তিনি ব‌লেন কালকে উনি কথা যখন বলেন— উনি নিজেই তো নেশাখোর, কেমন চোখ গুলো বেরিয়ে যাচ্ছিলো।একটা আইনি ব্যবস্থা নিতে হলে সময় দরকার। সে তো আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়েও যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবিও জানান। আর আজ রাঙ্গা জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী চলবে বলেও জানান তিনি।

এসময় নূর হোসেনের ভাই দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন এবং বোন শাহনাজ বেগম সহ পরিবারের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, জাপা মহাসচিব তাঁর বক্তব্য তুলে নিয়ে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রেসক্লাব থেকে সরে যাবেন না।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!